ঢাকা ০৫:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যান্সার সারাবে সাপের বিষ, বিজ্ঞানীদের দাবি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ১৭০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাপের বিষ স্তন ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে বলে সুখবর দিলেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এই দুই ধরনের ক্যান্সারের কোষ দ্রুত ধ্বংস করতে সক্ষম সাপের বিষ। তবে এখনই ক্যান্সার চিকিৎসায় সাপের বিষ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এর যথাযথতা যাচাই করতে এখনও সময়ের দরকার আছে আছে জানিয়েছেন গবেষকরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ক্যান্সার চিকিৎসায় সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্দান কলোরাডোর (ইউএনসি) একদল জীববিজ্ঞানী। তারা বলছেন, মানবরোগের চিকিৎসায় থেরাপি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে ভেনম (সাপের বিষ), তবে এজন্য আরও গবেষণার দরকার রয়েছে।
স্নেক ভেনমে উচ্চমাত্রায় বিষ রয়েছে। এর একটিমাত্র কাপড়ে মুহূর্তের মধ্যে কোনো প্রাণীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে শরীরে সরাসরি সাপের বিষের প্রয়োগ তাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের।
বিশ্বে যেসব রোগের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়ে থাকে ক্যান্সার তাদের মধ্যে অন্যতম। রোগটির নতুন প্রতিষধক তৈরির কাজটি এখনও চলমান।
তবে প্রতিষেধক তৈরিতে সাপের বিষ নিয়ে গবেষণার কারণও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাপের বিষে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও কেমিক্যাল রয়েছে। একটি সাপ থেকে যে পরিমাণ বিষ পাওয়া যায় তাতে কয়েক শ উপাদান থাকে। আর পৃথিবীতে যেসব প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়, তার ২৬টিই হলো সরীসৃপ গোত্রীয়।
উচ্চ রক্তচাপে ব্যবহৃত একটি ওষুধের নাম ক্যাপটোপ্রিল। এক ধরনের পেপটাইডের গঠনবিন্যাসের ওপর ভিত্তি করে ওষুধটি তৈরি করা হয়। গবেষকরা পেপটাইডটি সংগ্রহ করেন সাপের বিষ থেকে। ওষুধটি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। আর এ কারণেই মূলত সাপের বিষ থেকে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির জন্য নড়েচড়ে বসেছেন বিজ্ঞানীরা।
ইউনিভার্সিটি অব নর্দান কলোরাডোর একজন গবেষক ড. স্টিফেন ম্যাকেসি। তার গবেষণাগারটিই হবে প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান যেখানে ক্যান্সার চিকিৎসায় সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
সিবিএস ডেনভারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাকেসি বলেছেন, ‘এখানে একটা জটিল বিষয় হলো এগুলো (সাপের বিষ) বস্তু বা প্রাণীর মৃত্যুর কারণ…আবার স্বাভাবিক বিষয় হলো এগুলো বেঁচে থাকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। সাপের বিষের এই বৈশিষ্ট্যই ওষুধ তৈরির পেছনে যৌক্তিক কারণ। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক সাপের বিষ ক্যান্সার সেলকে নিখুঁতভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম।’
বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক শ সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ইউএনসির শিক্ষার্থীরা। এসব সাপের তালিকায় র‌্যাটল স্নেকস থেকে শুরু করে ভাইপারও রয়েছে। সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা করছেন তারা।
তাদের মধ্যে ভাইপার বিষ নিয়ে গবেষণা করছেন পিএইচডি ক্যান্ডিডেট ট্যানার হার্ভে। তিনি বলেন, ‘মাত্র অল্পমাত্রায় প্রয়োগে স্তন ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসে দ্রুত কাজ করে ভাইপার ভেনম। কোলন ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসেও একইভাবে কাজ করে। তবে এটি মেলানোমা (ত্বকের ক্যান্সারের কোষ)।’ তবে অন্যান্য সাপের বিষ মেলানোমা ধ্বংসে কাজ করে বলে তিনি জানান।
এখনও পর্যন্ত গবেষকরা তাদের ল্যাবেই ক্যান্সার কোষের ওপর ভেনমের প্রয়োগ ঘটিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে যেহেতু সাপের বিষ মানুষের জন্য প্রাণঘাতী, তাই কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মানবদেহে এর প্রয়োগ ঘটাতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
এ বিষয়ে গবেষক হার্ভে ম্যাকেসির ভাষ্য, “ক্যান্সার চিকিৎসায় সাপের বিষ নিয়ে বর্তমান গবেষণা ‘স্বর্ণ বাছাই করার প্যানের’ সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।”
অর্থাৎ গোল্ড প্যানের সাহায্যে যেভাবে খাদ থেকে খাঁটি স্বর্ণ বের করে আনা হয়, তেমনিভাবে এর প্রয়োগিক বিষয়ে এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ক্যান্সার সারাবে সাপের বিষ, বিজ্ঞানীদের দাবি

আপডেট টাইম : ১০:১৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাপের বিষ স্তন ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে বলে সুখবর দিলেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এই দুই ধরনের ক্যান্সারের কোষ দ্রুত ধ্বংস করতে সক্ষম সাপের বিষ। তবে এখনই ক্যান্সার চিকিৎসায় সাপের বিষ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এর যথাযথতা যাচাই করতে এখনও সময়ের দরকার আছে আছে জানিয়েছেন গবেষকরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ক্যান্সার চিকিৎসায় সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্দান কলোরাডোর (ইউএনসি) একদল জীববিজ্ঞানী। তারা বলছেন, মানবরোগের চিকিৎসায় থেরাপি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে ভেনম (সাপের বিষ), তবে এজন্য আরও গবেষণার দরকার রয়েছে।
স্নেক ভেনমে উচ্চমাত্রায় বিষ রয়েছে। এর একটিমাত্র কাপড়ে মুহূর্তের মধ্যে কোনো প্রাণীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে শরীরে সরাসরি সাপের বিষের প্রয়োগ তাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের।
বিশ্বে যেসব রোগের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়ে থাকে ক্যান্সার তাদের মধ্যে অন্যতম। রোগটির নতুন প্রতিষধক তৈরির কাজটি এখনও চলমান।
তবে প্রতিষেধক তৈরিতে সাপের বিষ নিয়ে গবেষণার কারণও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাপের বিষে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও কেমিক্যাল রয়েছে। একটি সাপ থেকে যে পরিমাণ বিষ পাওয়া যায় তাতে কয়েক শ উপাদান থাকে। আর পৃথিবীতে যেসব প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়, তার ২৬টিই হলো সরীসৃপ গোত্রীয়।
উচ্চ রক্তচাপে ব্যবহৃত একটি ওষুধের নাম ক্যাপটোপ্রিল। এক ধরনের পেপটাইডের গঠনবিন্যাসের ওপর ভিত্তি করে ওষুধটি তৈরি করা হয়। গবেষকরা পেপটাইডটি সংগ্রহ করেন সাপের বিষ থেকে। ওষুধটি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। আর এ কারণেই মূলত সাপের বিষ থেকে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির জন্য নড়েচড়ে বসেছেন বিজ্ঞানীরা।
ইউনিভার্সিটি অব নর্দান কলোরাডোর একজন গবেষক ড. স্টিফেন ম্যাকেসি। তার গবেষণাগারটিই হবে প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান যেখানে ক্যান্সার চিকিৎসায় সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
সিবিএস ডেনভারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাকেসি বলেছেন, ‘এখানে একটা জটিল বিষয় হলো এগুলো (সাপের বিষ) বস্তু বা প্রাণীর মৃত্যুর কারণ…আবার স্বাভাবিক বিষয় হলো এগুলো বেঁচে থাকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। সাপের বিষের এই বৈশিষ্ট্যই ওষুধ তৈরির পেছনে যৌক্তিক কারণ। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক সাপের বিষ ক্যান্সার সেলকে নিখুঁতভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম।’
বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক শ সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ইউএনসির শিক্ষার্থীরা। এসব সাপের তালিকায় র‌্যাটল স্নেকস থেকে শুরু করে ভাইপারও রয়েছে। সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা করছেন তারা।
তাদের মধ্যে ভাইপার বিষ নিয়ে গবেষণা করছেন পিএইচডি ক্যান্ডিডেট ট্যানার হার্ভে। তিনি বলেন, ‘মাত্র অল্পমাত্রায় প্রয়োগে স্তন ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসে দ্রুত কাজ করে ভাইপার ভেনম। কোলন ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসেও একইভাবে কাজ করে। তবে এটি মেলানোমা (ত্বকের ক্যান্সারের কোষ)।’ তবে অন্যান্য সাপের বিষ মেলানোমা ধ্বংসে কাজ করে বলে তিনি জানান।
এখনও পর্যন্ত গবেষকরা তাদের ল্যাবেই ক্যান্সার কোষের ওপর ভেনমের প্রয়োগ ঘটিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে যেহেতু সাপের বিষ মানুষের জন্য প্রাণঘাতী, তাই কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মানবদেহে এর প্রয়োগ ঘটাতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
এ বিষয়ে গবেষক হার্ভে ম্যাকেসির ভাষ্য, “ক্যান্সার চিকিৎসায় সাপের বিষ নিয়ে বর্তমান গবেষণা ‘স্বর্ণ বাছাই করার প্যানের’ সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।”
অর্থাৎ গোল্ড প্যানের সাহায্যে যেভাবে খাদ থেকে খাঁটি স্বর্ণ বের করে আনা হয়, তেমনিভাবে এর প্রয়োগিক বিষয়ে এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।